বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১২

আমাদের Agriculture মন্ত্রণালয় এবং তাদের Webসাইট।


কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ২৩%(জিডিপি) নির্ভর করে কৃষির উপর। বর্তমান ডিজিটাল যুগে কৃষিতে লেগেছে আধুনিকতার ছোয়া। আসছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি, নতুন নতুন পদ্ধতি। ইন্টারনেটের খাতিরে তৈরী হয়েছে কৃষি মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট(www.moa.gov.bd)। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা কতটুকু মানসম্পন্ন। ওয়েবসাইটটি তৈরী করা হয়েছে সম্পূর্ণ ইংলিশে। হেডার ইমেইজে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের লোগোটি এবং দু-একটি হেডিং ছাড়া আর কোথাও বাংলার ছিটেফোটাটি ও নেই। যে জাতি বাঙ্গালী হিসেব গর্ববোধ করে, বাংলা ভাষায় কথা বলতে যাদের বুক গর্বে ফুলে উঠে তাদের দেশের সরকারী ওয়েবসাইটে কেন বাংলার প্রতি এ অবহেলা? বুঝলাম বর্হিবিশ্বের সাথে যোগাযোগ, সংস্করণ তো দুইটা রাখা যেত। আমি দ্ধিধান্বিত এই ওয়েবসাইটটি তৈরী করা হয়েছে কাদের জন্য? কৃষি মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট অবশ্যই কথা বলবে কৃষকদের, খেটে খাওয়া মানুষদের। কিন্তু বাস্তবে তো তার সম্পূর্ণ উল্টো। সাইটটির বাম পাশের বারে রয়েছে ক্যারিয়ার অপরচুনিটি নামক একটি ট্যাব। যেখানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একটি পোষ্টের কথা বলা হয়েছে এম এল এস এস। শিক্ষাগত যোগ্যতা – এস এস সি। তো একজন এসএসসি পাশ করা ব্যক্তি যদি তার চাকুরীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এই ওয়েবসাইটে খোজে তারই দাত ভেঁঙ্গে যাওয়ার কথা, সেখানে একজন কৃষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা তো  নগণ্যই। সরকারের এই উদ্যোগকে অবশ্যই ছোট করে দেখার উপায় নেই। নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু আরো সময় নেয়া প্রয়োজন ছিল। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী সংস্করণ থাকলে দেশের প্রেক্ষিতে তা স্বার্থক হত।   

ওয়েব সাইটটির হোম পেইজের ফুটারে দেয়া আছে সর্বশেষ আপডেটঃ ৩০/১২/২০১০। কিন্তু ভেতরের কাহিনী আরো করুন। জনসংখ্যার যে বিবরণ দেয়া আছে তা ২০০১ সালের জরিপ অনুযায়ী। কেনো তারপর কি আর কোন জনসংখ্যা জরিপ হয় নি? বাৎসরিক খাদ্য শস্য উৎপাদনের বিবরণ, লক্ষ্যমাত্রা এবং অর্জন ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দেয়া আছে। ২০০৪ সালের পর কি বাংলাদেশে কোন ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় নি? এছাড়াও আরো কিছু তথ্য আছে যা এখনো পর্যন্ত আপডেট করা হয় নি। কিন্তু কেন? ওয়েব সাইটটি ডেভেলোপ করার মত কি কোন লোক নেই? নাকি ওয়েব সাইট থাকতে হবে সেজন্যই সাইটটি তৈরী করা। যেখানে আমাদের দেশের সোনাবরুরা না খেয়ে মরে সেখানে কি দরকার এই বিলাসিতার? নিজের পকেট ভরে আমাদের ম্যাজিক দেখিয়ে পেটপুজা করার জন্য এই দেশের জন্ম হয় নি।         

ওয়েব সাইটটির ডেভেলোপার কি চাইনীজ না জাপানী বুঝলাম না। ফুটারে ওয়েব ডেভেলোপার হিসেব দেয়া আছেঃ  Bangladesh Internet Press Ltd. । তাদের নামে ক্লিক করলে যে ওয়েবসাইট ওপেন হয় তা তো আরো ভয়াবহ। না বাংলা, না ইংলিশ সম্পূর্ণ চাইনীজ।  

সাইটটিতে নেই কোন ইমেজ গ্যালারী। নামে মাত্র কয়েকটা ছবি হোম পেইজে দেয়া আছে। আমাদের দেশে কি ধরণের খাদ্য-শস্য উৎপাদন হয়, কি ধরনের খাদ্য-দ্রব্য আমদানী-রপ্তানী করা হয়, কৃষি বিষয়ক সভা সেমিনার, পুরষ্কার ইত্যাদি নিয়ে একটি ডায়নামিক ইমেজ গ্যালারী তৈরী করা যেত। এতে করে অন্যান্য দেশ আমাদের দেশ থেকে আমদানী রপ্তানীতে আরো বেশি উৎসাহী হত। যদি বহির্বিশ্বের কথা চিন্তা করেই সাইটটি তৈরী করা হয়ে থাকে তবে সেখানে কোন ধরনের ইমেজ গ্যলারী না থাকা কতটা যৌক্তিক?

বাংলাদেশে কোন এলাকায় কি ধরনের এবং কি পরিমান খাদ্যদ্রব্য উৎপন্ন হয় সে বিষয়ক কোন ধারণা ওয়েবসাইটটিতে দেয়া হয় নি। একটা ম্যাপ যুক্ত করে কোন এলাকায় কি ধরনের শস্য, কোন মৌসুমে কি ধরনের খাদ্য-দ্রব্য উৎপন্ন হয় তা উল্লেখ করা যেত।
কোন ধরনের সার্চ অপশন ও খোজে পাওয়া গেলো না। বহুল কন্টেন্ট সমৃদ্ধ এই সাইটটিতে সার্চ অপশন না থাকাটা বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা। আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য খুজে বের করাটাও তাই সময় সাপেক্ষ।

বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। বাংলাদেশ ও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কয়েক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি মন্ত্রনালয়ের এই সাইটটিতে ফেইসবুক লাইক বক্স এবং ফ্যান পেইজ ব্যবহার করা যেত। এতে করে সর্বস্তরের মানুষ কৃ্ষি অধিদপ্তর সম্পর্কে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ ধারনা পেত। এবং ফেইসবুকে নিয়মিত আপডেটের মাধ্যমে জনগনকে আরো সচেতন করে তোলা যেত। আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা প্রতিষ্টান (IRRI) ও তাদের ওয়েবসাইটিতে এই ধরনের লাইক বক্স এবং ফ্যান পেইজ ব্যবহার করেছে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে শেয়ারের জন্য শেয়ার বক্স তৈরী করে তা দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া যেত সারা বিশ্বে।      

আমি ওয়েবসাইটটির প্রতি কর্তৃপক্ষের সুনজর কামনা করছি। যা আমাদের দেশের প্রতিচ্ছবি বহন করে, বহির্বিশ্বে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করে তাকে যথাযথ সম্মান দিন। আমাদেরকে আলু-পটল বুঝিয়ে পেটনীতি করার দিন শেষ। মানুষ এখন অনেক সচেতন। নিজের ষোল আনা বুঝে পেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কেউ ছেড়ে কথা বলবে না।

বিঃদ্রঃ লেখাটি বেশ কিছু আগে লিখেছিলাম একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য। পাকনামিটা মনে হয় একটু বেশীই করে ফেলেছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমাইবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন